নিজস্ব প্রতিবেদক, চকরিয়া ::
অবশেষে একটানা ৯বছর পর ব্যাপক উৎসাহ উদ্দিপনার মধ্যদিয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার অর্ন্তগত মাতামুহুরী সাংগঠনিক থানা আওয়ামীলীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন ও কাউন্সিল। গত ২৭ জুলাই উপজেলার ইলিশিয়া জমিলা বেগম উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে অনুষ্ঠিত বহুল প্রতিক্ষিত সম্মেলনে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও জাতীয় সংসদের হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন এমপি। সম্মেলনে কাউন্সিলরদের সরাসরি ভোটে পুনরায় সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন বর্তমান সভাপতি ও পশ্চিম বড় ভেওলা ইউপি চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বাবলা এবং নতুন সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন চকরিয়া উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মকছুদুল হক ছুট্ট।
জানা গেছে, ইলিশিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় হলরুমে বিকাল চারটার দিকে সম্মেলনের দ্বিতীয় অধিবেশনের শুরু হয়। এরপরে কক্সবাজার জেলা আওয়ামীলীগের নেতৃবৃন্দ মাতামুহুরী উপজেলা আওয়ামীলীগের সম্মেলনে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে আগ্রহী প্রার্থীদের বায়োডাটা জমা দিতে বলেন। এসময় সভাপতি পদে চারজন যথাক্রমে আলহাজ সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বাবলা, এসএম জাহাংগীর আলম বুলবুল, মাস্টার আবদুল জলিল ও সাবেক ছাত্রনেতা ইকবাল দরবেশী তাদের বায়োডাটা জমা দেন জেলা আওয়ামীলীগ নেতৃবৃন্দের হাতে।
সাধারণ সম্পাদক পদে প্রার্থীতার স্বপক্ষে বায়োডাটা জমা দেন ৬জন প্রার্থী। তাঁরা হলেন মহসিন বাবুল, মকছুদুল হক ছুট্টু, ফজল করিম, আনছারুল করিম, সাবেক ছাত্রনেতা সাজিদ হোসেন শাকিব ও সজিব মোস্তাফা। অবশ্য জেলা আওয়ামীলীগের সিনিয়র নেতৃবৃন্দের আহবানে সভাপতি পদে জাহাংগীর বুলবুল, ইকবাল দরবেশি তাদের প্রার্থীতা প্রত্যাহার করে নেন। ফলে সভাপতি পদে ভোট গ্রহণ হয় সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বাবলা (চেয়ার) ও মাস্টার আবদুল জলিল (ছাতা) দুইজনের মধ্যে।
অন্যদিকে সাধারণ সম্পাদক পদে বায়োডাটা জমা দিলেও ফজল কাদের, আনছারুল করিম, সাবেক ছাত্রনেতা সাজিদ হোসেন শাকিব ও সজিব মোস্তাফা তাদের প্রার্থীতা প্রত্যাহার করে নেন জেলা আওয়ামীলীগের সিনিয়র নেতৃবৃন্দের আহবানে। ফলে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় থাকা মহসিন বাবুল (সাইকেল) ও মকছুদুল হক ছুট্টু (তালা) প্রতীকে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়।
আওয়ামীলীগের দলীয় সুত্রে জানা গেছে, সম্মেলনে সাংগঠনিক শৃঙ্খলা মেনে কক্সবাজার জেলা আওয়ামীলীগের সিনিয়র নেতৃবৃন্দের আহবানে প্রার্থীতা প্রত্যাহার করে নেয়ায় সম্মেলনে প্রার্থী হওয়া এসব নেতৃবৃন্দকে নতুন কমিটিতে সম্পৃক্ত করে সম্মাণিত করা হয়। তাদের মধ্যে চকরিয়া উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান এসএম জাহাংগীর আলম বুলবুলকে সিনিয়র সহসভাপতি, ফজল কাদেরকে সহ-সভাপতি, সাবেক ছাত্রনেতা ইকবাল দরবেশী, আনসারুল করিম ও সাজিদ হোসেন শাকিবকে সাংগঠনিক সম্পাদক এবং সজিব মোস্তাফাকে প্রচার সম্পাদক করা হয়েছে।
ভোট গ্রহণ শেষে নবনির্বাচিত সভাপতি সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বাবলা ও সাধারণ সম্পাদক মকছুদুল হক ছুট্টু এবং সম্মেলনে প্রার্থী হয়ে পরে সরে দাঁড়ানো সহসভাপতি সাংগঠনিক সম্পাদক ও প্রচার সম্পাদক পদে মুল্যায়ন করা ত্যাগী নেতৃত্ব সবার নাম ঘোষনা দেন জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। তবে সম্মেলনে প্রার্থী না হলেও পরবর্তীতে সাংগঠনিক সম্পাদক পদে যুক্ত হয়েছেন পুর্ববড় ভেওলা ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের প্রয়াত সভাপতি গোলাম কাদের সওদাগরের ছেলে শহিদুল ইসলাম সোহেল। এরআগে তিনি গত ১৭ জুলাই অনুষ্ঠিত পুর্ববড় ভেওলা ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সম্মেলনে সাধারণ সম্পাদক পদে প্রার্থী হয়েছিলেন।
সম্মেলনের উদ্ধোধন করেন- কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অ্যাডভোকেট ফরিদুল ইসলাম চৌধুরী। প্রধান বক্তর বক্তব্য দেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মেয়র মুজিবুর রহমান।
মাতামুহুরী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ইউপি চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বাবলার সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মহসিন বাবুলের সঞ্চালনায় অনুষ্টিত সম্মেলনে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন- আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট সিরাজুল মোস্তফা, কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সালাহউদ্দিন আহমদ, সহ-সভাপতি মো.রেজাউল করিম, যুগ্ম-সম্পাদক অ্যাডভোকেট রনজিত দাশ, সাংগঠনিক সম্পাদক মাহাবুবুর রহমান চৌধুরী, নাজরিন সরওয়ার কাবেরী, বন ও পরিবেশ সম্পাদক লায়ন কমর উদ্দিন আহমদ, জেলা আওয়ামীলীগের সদস্য এটিএম জিয়াউদ্দিন চৌধুরী, আমিনুর রশিদ দুলাল, মিজানুর রহমান, চকরিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গিয়াস উদ্দিন চৌধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক মিজবাউল হকসহ জেলা ও উপজেলা আওয়ামী লীগ এবং সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দরা।
উল্লেখ্য, দীর্ঘ ৯ বছর পর মাতামুহুরী সাংগঠনিক উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন ও কাউন্সিল অনুষ্টিত হয়। এই কাউন্সিলে ২শ ৯৯জন কাউন্সিলর তাদের প্রত্যক্ষ ভোটে নেতা নির্বাচিত করেন।
সম্মেলনে নতুন কমিটিতে সহ-সভাপতি পদে মুল্যায়িত হওয়া প্রসঙ্গে ফজল কাদের বলেন, ছাত্রজীবনে ছাত্রলীগের রাজনীতিতে ছিলাম। যুবলীগের পাশাপাশি টানা দীর্ঘদিন কৃষকলীগ মাতামুহুরী সাংগঠনিক উপজেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক পদে দায়িত্ব পালন করেছি। পরবর্তীতে আওয়ামীলীগের রাজনীতিতে নিজেকে জড়িয়ে নিই। ত্যাগের মুল্যায়ন হিসেবে দল আমাকে মুল্যায়িত করেছে।
সাংগঠনিক সম্পাদক পদ পেয়ে খুশি আনছারুল করিম। মাতামুহুরী উপজেলা যুবলীগের আহবায়ক ছিলেন তিনি। পরবর্তী প্রজন্মকে জায়গা দিতে তিনি যুবলীগ থেকে আওয়ামীলীগের এসেছেন। সবার সহযোগিতা চেয়েছেন তিনি।
কারানির্যাতিত দুই ছাত্রনেতা স্থান পেয়েছেন মাতামুহুরি আওয়ামী লীগের কমিটিতে। তাদের মধ্যে সাংগঠনিক সম্পাদক পদে সাবেক ছাত্রনেতা ইকবাল দরবেশী। অপরজন সজিব মোস্তাফা। তিনি হয়েছেন উপজেলা আওয়ামীলীগের প্রচার সম্পাদক।
ইকবাল দরবেশী বলেন, ১৯৯৬ সালে দরবেশকাটা উচ্চ বিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়ে সেই থেকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আর্দশে ও দেশরত্ম শেখ হাসিনার নেতৃত্বে অবিচল থেকে আওযামী রাজনীতিতে আছি। ২০০০ সালে পশ্চিম বড় ভেওলা ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হই। এরপর বিএনপি জামাত জোট সরকারের আমলে আমার বাড়িঘরে হামলা চালানো হয়। আমার পরিবারের উপর নির্যাতন করা হয়। ২০০৩ সালে বৃহত্তর চকরিয়া উপজেলা ছাত্রলীগের (লিটু শওকত) কমিটির প্রচার সম্পাদক নির্বাচিত হই। ২০০৯ সালে চকরিয়া উপজেলা মৎস্যজীবি লীগের আহবায়ক, ২০১৪ সালে জেলা মৎস্যজীবি লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও পরবর্তীতে উপজেলা মৎস্যজীবি লীগের সভাপতি হই। অবশ্য দুইবছর আগে চকরিয়া উপজেলা মৎস্যজীবি লীগের কমিটি মেয়াদ উর্ত্তীণ হয়ে গেছে।
সাবেক ছাত্রনেতা ইকবাল দরবেশি আরও বলেন, ছাত্রলীগের রাজনীতিতে যখন ছিলাম, আন্দোলন সংগ্রামে কোনদিন পিছপা হয়নি। সেকারণে বিএনপি সরকারের কতিপয় নেতারা আমার বিরুদ্ধে ৭টি মামলা দিয়েছে। আমাকে গ্রেফতার করিয়ে পুলিশ দিয়ে নির্মম নির্যাতন করা হয়েছে। আমি মনে করি, উপজেলা আওয়ামীলীগের কমিটিতে সাংগঠনিক সম্পাদক দিয়ে আমাকে একজন কারানির্যাতিত ও ত্যাগী কর্মী হিসেবে মুল্যায়ন করা হয়েছে।
মাতামুহুরী উপজেলা আওয়ামীলীগের প্রচার সম্পাদক হয়েছেন সাবেক ছাত্রনেতা মোস্তাফা কামাল(সজিব মোস্তাফা) তিনি বলেন, আমি ছোটবেলা থেকেই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শ ধারণ করেছি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বকে শ্রদ্ধা করি। বিএনপি জামাত জোট আমলে ইলিশিয়া দরবেশকাটায় প্রকাশ্যে জয় বাংলার স্লোগান দিতে যখন কেউ সাহস করতো না, সেইদিন আমি সজিব মোস্তাফা মাইকে জয়বাংলার স্লোগান দিয়েছি।
তিনি বলেন, রাজনীতির প্রথমপহরে আমি পশ্চিম বড় ভেওলা ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি ও ইউনিয়ন যুবলীগের আহবায়ক হিসেবে পর্যায়ক্রমে দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন করেছি। ২০০৩ সালে বৃহত্তর চকরিয়া উপজেলা ছাত্রলীগের (লিটু শওকত) কমিটির সহ-সভাপতি ছিলাম। একটানা দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন করেছি মাতামুহুরী সাংগঠনিক উপজেলা জাতীয় শ্রমিকলীগের আহবায়ক হিসেবে।
সজিব মোস্তাফা বলেন, আওয়ামীলীগের রাজনীতি ও আন্দোলন সংগ্রামে কোনদিন পেছনে লুকিয়ে থাকিনি। সেইকারণে বিএনপি সরকারের লোকজন ১৯৯৬ সালে অসহযোগ আন্দোলনের সময় মিথ্যা মামলায় আমাকে আসামি করেছে। ২০০৪ সালে গ্রেনেড হামলার বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছি, সেইকারণে আমাকে মামলায় আসামি করেছে। আবার ২৮ অক্টোবর লগিবৈঠা আন্দোলন ঠেকাতে চকরিয়া মাতামুহুরীর রাজপথে ছিলাম। সেইদিনও আমাকে আসামি করেছে বিএনপির লোকজন। তবু আমার নিজেকে স্বার্থক মনে করছি, আজ প্রাণের সংগঠন আওয়ামীলীগ মাতামুহুরী উপজেলা কমিটি আমাকে প্রচার সম্পাদক হিসেবে মুল্যায়িত করেছে।
সাবেক ছাত্রনেতা ইকবাল দরবেশী ও সজিব মোস্তাফা বলেন, একজন রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে আওয়ামীলীগের কাছে আর আমাদের চাওয়া পাওয়া কিছু নেই। আমাদেরকে যে পদে মুল্যায়িত করা হয়েছে তা নিয়ে আমরা সুন্দর আগামীর পথে এগিয়ে যেতে চাই। পরিশেষে কারানির্যাতিত মুজিব আর্দশের কর্মী হিসেবে আমাদের পাশে থাকায় কক্সবাজার জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এবং সকলস্তরের নেতৃবৃন্দ সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।
পাঠকের মতামত: